শাওমি ফোন কিভাবে রাতারাতি বাজার দখল করে নিল? জানুন
মোবাইল ফোন এখন আর কোন বিলাশিতা নয় বরং দৈনন্দিন জীবনের এক নিত্য প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। বর্তমান বিশ্বের চতুর্থ বড় স্মার্ট ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শাওমি গত ৫ বছর আগেও ছিল ছোট একটি সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
স্মার্ট ফোন বিক্রির প্রতিযোগিতা মূলক বাজারে শাওমি কিভাবে রাতারাতি বাজার দখল করে নিল। চলুন সেটা জানা যাক।
চিনের একটি ইলেক্ট্রনিক সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার কোম্পানি শাওমি বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ স্মার্ট ফোন নির্মাতা। শাওমি ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা লাভ করে মাত্র ৪ বছরে চায়নার প্রযুক্তি বাজার পুরোপুরি উলটে দিয়েছে।
২০১০ সালে যাত্রা শুরু করার পর ২০১৪ সালেই তারা চায়নার সবচেয়ে বড় স্মার্ট ফোন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ২০১১ সালে শাওমি তাদের প্রথম স্মার্ট ফোন বাজারে ছাড়ার পর ২০১৩ সালের মধ্যে ১ কোটি স্মার্ট ফোন বিক্রি করে ফেলে।
এছাড়া শাওমি ২০১৪ সালে ৬ কোটি ও ২০১৫ সালে ৮ কোটি স্মার্ট ফোন বিক্রি করে। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারী তে শাওমির রেডমি ফোন বাজারে ছাড়ার ২ মিনিটের মধ্যে সব স্মার্ট ফোন বিক্রি হয়ে যায়।
বিশ্বব্যপি স্মার্ট ফোনের বাজারে স্যামসাঙ,অ্যাপেল,হুয়াওয়ে সহ চায়নার বেশ কিছু বড় বড় কোম্পানিকে পিছে ফেলে মাত্র ৫ বছরে শাওমির এই বিপ্লব সত্যই বিস্ময়।
আতিতে কোন হার্ডওয়্যার কোম্পানি এত দ্রুত বেড়ে উঠেনি। স্মার্ট ফোন বিক্রির প্রতিযোগিতা মূলক বাজারে স্যামসাঙ,অ্যাপেল এর মত প্রতিষ্ঠান এর আধিপত্য ঠেকাতে শাওমি আবিষ্কার করেছে নতুন বিজনেস মডেল।
তাদের এই মডেল এর প্রধান উদ্দেশ্য হল সবচেয়ে সেরা ফোন সর্বনিম্ন দামে বিক্রি করার মাধ্যমে বাজারে তাদের ভক্ত শ্রেণি তৈরী করা।
স্যামসাঙ ,অ্যাপেলের সেরা সব স্মার্ট ফোনগুলোর উৎপাদন খরচ প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ ইউএস ডলার। কিন্তু এইসব ফোন গুলো বিক্রি হয় ৬০০ থেকে ৮০০ ডলার এ। এসব ফোনের গুদাম ও বাজারজাতকরন সরবরাহ বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা ও খুচরা বিক্রেতাদের লভ্যাংশ রাখার পর দাম বেড়ে যায় ৩ থেকে ৪ গুন।
মূলত আধিপত্যশীল ব্রান্ডের বাজার ধরে রাখতে কোম্পানি গুলোকে বিজ্ঞাপন ও প্রচারণায় প্রচুর অর্থ খরচ করতে হয়। স্মার্ট ফোনের মূল্যের সাথে সাথে এইসব খরচ ও কোম্পানি গুলো ভোক্তার কাছ থেকেই রেখে দেয়।
কিন্তু শাওমি এই সকল খরচ বাদ দিয়ে প্রতিযোগীদের চেয়ে অর্ধেক দামে তাদের সেরা ফোন গুলো বাজারে ছেড়ে দেয়।
কোম্পানিটি ফোনের দাম উৎপাদন খরচ এর চেয়ে মাত্র ৫ ডলার বেশি রাখে। যদিও ফোনের গুনাগুন ও কর্মক্ষমতা অন্যান্য ফোনের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়।
শাওমি এদের ভোক্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে প্রতি দুই মাস পর পর তাদের অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করে থাকে। যে সুবিধাটি অন্য কোন প্রিমিয়াম ফোনেও পাওয়া যায় না।
তাছাড়া শাওমি তাদের বেশির ভাগ ফোন নিজেদের ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে। এর ফলে তাদের আলাদা করে কোন দোকান বা গুদাম খরচ নেই।
অন্য দিকে শাওমি বিজ্ঞাপনে ও খুব বেশি টাকা খরচ করে না। তাদের প্রচারণার আসল জায়গা হল সোসাল মিডিয়া। এছাড়াও এদের সবচেয়ে বড় শক্তি হল এদের উজার কমিউনিটি।
বিজ্ঞাপন দিয়ে ভোক্তাকে না ধরে ভোক্তাই যেন তাদের পণ্য খুজে নেয় সে ব্যবস্থা করার মাধ্যমে শাওমি পুরো বাজার কেই বদলে দিয়েছে।
শাওমির দেখানো এই বাজার ব্যবস্থা অনুসরণ করতে শুরু করেছে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গুলোও। হুয়াওয়ে শাওমিকে ধরতে Honor নামে নতুন ব্রান্ড প্রতিষ্ঠা করেছে।
Oppo থেকে কিছু কর্মকর্তা বেরিয়ে এসে তৈরি করেছে One Plus নামের আর একটি ফোন। এছাড়াও বহু চীনা প্রতিষ্ঠান শাওমিকে অনুসরণ করে নতুন বাজার ব্যবস্থায় ঢুকতে শুরু করেছে।
আর এ ব্যবস্থার মূল কথা হল সস্তায় সেরা ফোন দেয়ার মাধ্যমে ভোক্তার আগ্রহ ধরে রাখা। শাওমির উদ্ভাবিত নতুন এই বাজার ব্যবস্থায় ক্রেতারাই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে।
No comments